মুর্খের সাথে কখনো তর্কে যেওনা
শুরুতেই আসি মূর্খ কারা এটি নিয়ে। প্রকৃত অর্থে মূর্খ বলতে আমরা অক্ষর জ্ঞান-হীনকে বুঝাচ্ছি না। বরং যারা নিজের ভুল-মত ও ভুল সিদ্ধান্তের ওপর অটল থাকে তাদেরকে বুঝাচ্ছি।
মূর্খ কারা সে সম্পর্কে শেখ সাদী একটু ভিন্ন কথা বলেছেন,তাঁর মতে-
"তুমি যত বড় পণ্ডিতব্যক্তি হও না কেন, নিজের জীবনে তার প্রতিফলন ব্যতীত তুমি মূর্খ।"
এ সম্পর্কে মহাশ্বেতা দেবী বলেছেন-
"যারা লেখাপড়া জানে না তারাই শুধু মূর্খ নয়। যারা জানতে বুঝতে চায় না, প্রশ্ন করতে পারে না, যাদের জ্ঞানতৃষ্ণা নেই তারাও মূর্খ।"
এখন আসি মূর্খদের সাথে কেন তর্ক করা উচিৎ নয়,
মূর্খদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর একটি সুন্দর উক্তি আছে,তিনি বলেন-
" মূর্খদের সঙ্গে কখনো তর্ক করতে যাবেনা। কারণ হলো মূর্খরা তোমাকে তাদের পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে এসে তর্কে হারিয়ে দিবে ''। এছাড়াও মূর্খদের সাথে কেন আড্ডা দেওয়াও উচিৎ নয় এ সম্পর্কে হযরত আলী (রা.) বলেন- "মূর্খদের আড্ডা থেকে সব সময় দূরে থাকতে চেষ্টা করো, অন্যথায় তারা তোমাকেও মূর্খে পরিণত করে দেবে।"
একটু চিন্তা করলে বুঝা যায় 'মূর্খের সাথে তর্কে জড়ালে হতাশা বাড়েই শুধু'। বন্ধুদের সাথে তর্কে জড়ালে বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরে এবং ফাটল না ধরলেও তর্কের মধ্যে কোন কথায় এক বন্ধু আরেক বন্ধু দ্বারা কষ্ট পায়, মনমালিন্য হয়।
মুর্খের সাথে তর্কে যাওয়া কেন উচিৎ নয়?
তর্ক দ্বারা একে অন্যের প্রতি অনাস্থা বাড়ে। যার সাথে তর্ক করছি সে বয়েসে বড় হলে তার প্রতি শ্রদ্ধা কমে, অপরদিকে বয়সে ছোট হলে তার প্রতি তার শ্রদ্ধা বোধ কমবে, নিজের বয়সী হলে পরস্পরের ভালবাসা ক্ষুন্ন হয়।
মূর্খদের সাথে তর্ক করা নিয়ে আর কুরান কি বলে?
আল্লাহ্-তা'আলা কুরআনে এ ব্যাপারে সুন্দর কথা বলেছেন। সুবহানাল্লাহ,আমাদের চলার কি অসাধারণ পথ নির্দেশনা আল্লাহ নাজিল করেছেন। আল্লাহ সুরা ফুরকানের ৬৩ নাম্বার আয়াতে বলেন,
"রহমান-এর বান্দা তারাই,যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে ,তখন তারা বলে, সালাম।"
কোরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
‘আর যখন তারা কোনো বেহুদা কথা শোনে, তা উপেক্ষা করে যায়। বলে, আমাদের কাজের ফল আমরা পাব এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের, আমরা জাহেলদের সঙ্গে কথা বলি না।’--- সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৫
ছোটখাট বিষয়ে বিতর্ক করলে সময় নষ্ট হয়। কারণ আমাদের মাঝে এমন অনেক লোক আছে যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চেয়ে ছোটখাট বিষয়গুলো সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখে।
বুদ্ধিমানরা তর্ক এড়িয়ে চলে
অনর্থক বাক-বিতণ্ডা মানুষের অন্তর কঠিন করে তোলে। ইবরাহিম নখয়ি (রহ.) বলেন, এটি এমন একটি দুশ্চরিত্র, যাকে সালফে সালেহীনরা খুব ঘৃণা করতেন এবং এ থেকে অনেক দূরে থাকতেন।
মূর্খের তর্ক নিয়ে একটি শিক্ষা-মূলক গল্প
সবশেষে এখন একটি গল্প দ্বারা বিষয়টি আরো পরিষ্কার করা যাক,
একদিন গাধা বাঘকে বলল — "ঘাসের রং নীল। " বাঘ উত্তর দিল — "না, ঘাসের রং সবুজ। " কিছুক্ষনের মধ্যেই দু'জনের আলোচনা তুমুল তর্কে পরিণত হলে, তারা জঙ্গলের রাজা সিংহের কাছে বিচারের জন্য উপস্থিত হল।
রাজদরবারে সিংহের কাছে পৌঁছানোর আগেই গাধা ডাক ছাড়তে শুরু করে দিল —
" মহারাজ, আপনিই বলুন ঘাসের রং নীল কি না?"
সিংহ উত্তর দিল -- " হ্যাঁ, ঘাসের রং নীল।"
গাধা তাড়াতাড়ি সিংহের কাছে পৌঁছালো এবং বলতে থাকল —
" বাঘ আমার কথা মানছে না, তর্ক করছে এবং আমাকে বিরক্ত করছে। ওকে শাস্তি দিন।"
সিংহ তখন ঘোষণা করল
--" বাঘকে ৫ বছরের জন্য মৌন থাকার শাস্তি দেওয়া হল।"
গাধা খুশিতে লাফাতে লাগল এবং বলতে বলতে চলে গেল — " ঘাসের রং নীল, ঘাসের রং নীল।"
বাঘ শাস্তি মেনে নিল, কিন্তু সিংহকে জিজ্ঞাসা করল —" মহারাজ, আপনি আমায় শাস্তি দিলেন কেন যখন ঘাসের রং সত্যিই সবুজ।"
সিংহ বলল —" ঠিক, ঘাসের রং সবুজ।"
বাঘ জিজ্ঞাসা করল —" তাহলে আপনি আমায় শাস্তি দিলেন কেন?"
সিংহ উত্তর দিল —
" ঘাসের রঙ নীল না সবুজ তা বলার জন্য তোমার শাস্তি হয়নি। তোমার শাস্তি হয়েছে গাধার সঙ্গে তর্ক করে তোমারমহামূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য। তোমার মতো বুদ্ধিমান প্রাণী যদি এমন কাজ করে তবে বাকিরা কি শিখবে”?
তোমাকে শাস্তি দেওয়ার সাথে ঘাসের রং সবুজ না নীল, সেই প্রশ্নের কোনো সম্পর্ক নেই। তোমাকে শাস্তি দিয়েছি কারণ তোমার মত সাহসী, বুদ্ধিমান প্রাণী একটা গাধার সাথে তর্ক করে সময় নষ্ট করেছ এবং এইরকম একটা বাজে কারণে আমার কাছে এসে আমার সময় নষ্ট করেছ।"
মুর্খের সাথে কখনো তর্কে যেওনা।
অনুপ্রেরনা-মূলক এরকম আরো গল্প এবং তথ্য-প্রযুক্তির সকল আপডেট পেতে 'টেক বাংলা ইনফো' এর সাথেই থাকুন; ধন্যবাদ আপনাকে।